বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে পুরুষ। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা বাংলা ব্যাকরণে পুরুষ কাকে বলে? পুরুষ কত প্রকার ও কি কি? পুরুষের বিভিন্ন প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

Table of contents
পুরুষ কাকে বলে? পুরুষ কি?
ব্যক্তি বা বস্তু নির্দেশক সর্বনামকেই ব্যাকরণে পক্ষ বা পুরুষ বলে। আবার বলা যায় যে, সর্বনাম বা বিশেষ্য পদের দ্বারা বক্তা, শ্রোতা বা অন্য কোন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয় , তাকে পুরুষ বলা হয়। সুতরাং এক কথায় বলা যায় বিশেষ্য বা সর্বনামের বিভিন্ন প্রকৃতিকে ব্যাকরণে পুরুষ বলে।
উদাহরণ:”আমি এবং তুমি আগামীকাল সীমা দের বাড়ি যাব।” এ বাক্যটিতে তিন জনের কথা বলা হয়েছে।
- “আমি” হলো বক্তা (যে কথাটি বলছে)
- “তুমি” হলো শ্রোতা (যে কথাটি শুনছে)
- “সীমা” বক্তাও নয় আবার শ্রোতাও নয় (যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে)
পুরুষ কয় প্রকার ও কি কি?
পুরুষ প্রধানত তিন প্রকার। এগুলো হলো –
- উত্তম পুরুষ (আমি, আমার)
- মধ্যম পুরুষ (তুমি, তোমরা)
- নাম পুরুষ (সে, তারা, তিনি)
উত্তম পুরুষ কাকে বলে? উদাহরণ দাও
বক্তা নিজের নামের পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহারে তাকে প্রথম পুরুষ বা উত্তম পুরুষ বলা হয়। এক কথায়, স্বয়ং বক্তাই উত্তম পুরুষ বা প্রথম পুরুষ। যেমন- আমি, আমার, আমরা, আমাদের, আমাদিগকে, আমাদিগের।
মধ্যম পুরুষ কাকে বলে? কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণ দাও
বাংলা ব্যাকরণে, যার সাথে কথা বলা হচ্ছে তাকে মধ্যম পুরুষ বলা হয়। আবার বলা যায় কাউকে যখন কোন কিছু বলা হয় তখন সেই শ্রোতার পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহার করা হয় তাকে মধ্যম পুরুষ বলা হয়।
এক কথায়, প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাকে মধ্যম পুরুষ বলে। মধ্যম পুরুষের সাথে বিশেষ্য, সর্বনাম এবং ক্রিয়ার রূপ পরিবর্তিত হয়। যেমন – তুমি, তোমরা।
মধ্যম পুরুষ আবার তিন প্রকার। যেমন –
- সাধারণ মধ্যম পুরুষ
- সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষ
- অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষ
ক) সাধারণ মধ্যম পুরুষ:
- সাধারণ মধ্যম পুরুষ ব্যবহার করা হয় যখন কোন নির্দিষ্ট সম্মান বা অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয় না।
- একবচন সাধারণ মধ্যম পুরুষ রূপ হল “তুমি”।
- বহুবচন সাধারণ মধ্যম পুরুষ রূপ হল “তোমরা”।
উদাহরণ:
-
একবচন:
- তুমি কি খেয়েছো?
- তুমি কোথায় যাচ্ছো?
- তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?
-
বহুবচন:
- তোমরা কি খেয়েছো?
- তোমরা কোথায় যাচ্ছো?
- তোমরা কি আমাদের সাহায্য করবে?
খ) সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষ:
- সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষ ব্যবহার করা হয় যখন বক্তা শ্রোতাকে সম্মান প্রকাশ করতে চান।
- একবচন সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষ রূপ হল “আপনি”।
- বহুবচন সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষ রূপ হল “আপনারা”।
উদাহরণ:
-
একবচন:
- আপনি কি খেয়েছেন?
- আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
- আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন?
-
বহুবচন:
- আপনারা কি খেয়েছেন?
- আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?
- আপনারা কি আমাদের সাহায্য করবেন?
গ) অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষ:
- অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষ ব্যবহার করা হয় যখন বক্তা শ্রোতাকে অবজ্ঞা প্রকাশ করতে চান।
- একবচন অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষ রূপ হল “তুই”।
- বহুবচন অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষ রূপ হল “তোমরা” (সাধারণ মধ্যম পুরুষের সাথে একই)।
উদাহরণ:
-
একবচন:
- তুই কি খেয়েছিস?
- তুই কোথায় যাচ্ছিস?
- তুই কি আমাকে সাহায্য করবি?
-
বহুবচন:
- তোমরা কি খেয়েছো?
- তোমরা কোথায় যাচ্ছো?
- তোমরা কি আমাদের সাহায্য করবে?
নাম পুরুষ কাকে বলে? কয় প্রকার ও কি কি?
বক্তা যখন অনুপস্থিত কারো সম্পর্কে কোন কিছু বলে তখন ঐ অনুপস্থিত ব্যক্তি বা বস্তুর নাম অথবা নামের পরিবর্তে অন্য যে সর্বনাম পদ ব্যবহার করে তখন তাকে প্রথম পুরুষ বা নাম পুরুষ বলে। এক কথায় অনুপস্থিত পরোক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীই নাম পুরুষ। যেমন- সে, তারা, তিনি।
নাম পুরুষ আবার দুই প্রকার। যথাঃ
- সাধারণ নাম পুরুষ
- সম্মানসূচক নাম পুরুষ
ক) সাধারণ নাম পুরুষ:
- সাধারণ নাম পুরুষ ব্যবহার করা হয় যখন কোন নির্দিষ্ট সম্মান প্রকাশ করা হয় না।
- একবচন সাধারণ নাম পুরুষ রূপ হল “সে”।
- বহুবচন সাধারণ নাম পুরুষ রূপ হল “তারা”।
উদাহরণ:
-
একবচন:
- সে ছেলেটি খুব ভালো।
- সে মেয়েটি খুব সুন্দর।
- সে বইটি খুব আকর্ষণীয়।
-
বহুবচন:
- তারা ছেলেরা খুব খেলাধুলা করে।
- তারা মেয়েরা খুব গান গায়।
- তারা বইগুলো খুব মূল্যবান।
খ) সম্মানসূচক নাম পুরুষ:
- সম্মানসূচক নাম পুরুষ ব্যবহার করা হয় যখন বক্তা বিষয়বস্তুকে সম্মান প্রকাশ করতে চান।
- একবচন সম্মানসূচক নাম পুরুষ রূপ হল “ইনি”।
- বহুবচন সম্মানসূচক নাম পুরুষ রূপ হল “এঁরা”।
উদাহরণ:
-
একবচন:
- ইনি ছেলেটি খুব ভালো।
- ইনি মেয়েটি খুব সুন্দর।
- ইনি বইটি খুব আকর্ষণীয়।
-
বহুবচন:
- এঁরা ছেলেরা খুব খেলাধুলা করে।
- এঁরা মেয়েরা খুব গান গায়।
- এঁরা বইগুলো খুব মূল্যবান।
মনে রাখবেন, সম্মানসূচক নাম পুরুষ ব্যবহার করা সাধারণত লেখায় ব্যবহৃত হয়, কথায় কম ব্যবহৃত হয়।
পুরুষের বিভিন্ন প্রকৃতি
- পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য হয়, কিন্তু ক্রিয়ার রূপে কোনো পার্থক্য হয় না।
- সাধারণ, সম্ভ্রমাত্মক ও তুচ্ছার্থক ভেদে মধ্যম ও নাম পুরুষের ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য হয়ে থাকে কিন্তু উত্তম পুরুষে হয় না।
- সাধারণ ভবিষ্যৎ কালে নাম পুরুষ ও মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ অভিন্ন।
- করেছে, করেছো, করেছেন- বাংলা ক্রিয়ার এ তিনটি রূপ মর্যাদা ভেদের কারণে ব্যবহৃত হয়।
পুরুষ | একবচন | বহুবচন |
---|---|---|
উত্তম পুরুষ | আমি (মুই) | আমরা (মোরা) |
মধ্যম পুরুষ | তুমি, তুই,আপনি | তোমরা, তোরা |
নাম পুরুষ | সে, তিনি, ইনি, উনি | তারা, ওরা, এরা |
বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ MCQ
০১. ব্যাকরণে পুরুষ কাকে বলে? (সাব রেজিস্টার : ০৩)
- বিশেষ্য ও সর্বনামের বিভিন্ন প্রকৃতিকে
- বিশেষ্য ও অব্যয়ের বিভিন্ন প্রকৃতিকে
- সর্বনামের বিভিন্ন প্রকৃতিকে
- বিশেষ্যের বিভিন্ন প্রকৃতিকে
০২. বাংলা ব্যাকরণে পুরুষ কত প্রকার? (বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক : ২০)
- ২
- ৩
- ৪
- ৫
০৩. কোনটি উত্তম পুরুষের উদাহরণ? (বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি পরিচালক : ১০)
- আমি
- তুমি
- সে
- যিনি
০৪. শুদ্ধ বাক্য কোনটি? (প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক : ১৯)
- তুমি, শফিক ও আমি সিনেমা দেখতে যাব
- আমি, শফিক ও তুমি সিনেমা দেখতে যাব
- তুমি, আমি ও শফিক সিনেমা দেখতে যাবো
- শফিক, তুমি ও আমি সিনেমা দেখতে যাব
০৫. কোন বাক্যে নাম পুরুষের ব্যবহার করা হয়েছে? (১৩ তম বিসিএস)
- ওরা কি করে?
- আপনি আসবেন
- আমরা যাচ্ছি
- তোরা খাস নে
০৬. করেছে, করেছো, করেছেন – বাংলা ক্রিয়ার এ তিনটি রূপ কেন ব্যবহৃত হয়? (অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড সিনিয়র অফিসার -১০)
- লিঙ্গভেদের কারণে
- মর্যাদা ভেদের কারণে
- কারক বিভক্তির কারণে
- সমাসের কারণে
০৭. প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাকে বলে – (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলজিইডিতে সরকারি প্রকৌশলী – ০৫)
- উত্তম পুরুষ
- নাম পুরুষ
- মধ্যম পুরুষ
- ক ও খ
বাংলা ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ টপিক কারক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পড়ুন – কারক কাকে বলে? কারক কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা